আমাদের ছোট নদী চলে এঁকেবেঁকে…
শৈলকুপার কুমার নদ (Kumar River)
চুয়াডাঙ্গা জেলার হাটবোয়ালিয়ায় মাথাভাঙ্গা নদী থেকে উদ্ভূত একটি নদ। জেমস রেনেল ১৭৬৪ সালে তাঁর অঙ্কিত মানচিত্রে এ নদের উল্লেখ করেছেন। তখন এ নদ বিশেষ কার্যক্ষম ছিল না। বর্ষা মৌসুমে পানিতে পূর্ণ থাকলেও শুকনা মৌসুমে নদটি শুকিয়ে যেত। আশপাশের বহু বিল থেকে পানি বয়ে আনত বলে এ নদের পানির রঙ ছিল অনেকটা কালো। ফলে স্থানীয়ভাবে এ নদকে বলা হতো কালোবিল।
উৎপত্তিস্থল থেকে কুমার নদ বর্তমানে নবগঙ্গার প্রায় সমান্তরালে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। মাগুরার কাছে নবগঙ্গার সঙ্গে মিলিত হয়ে মিলিত স্রোত নবগঙ্গা নামেই দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। কুমার একসময় প্রবাহ পথে কালীগঙ্গা, ছাকু, হানু, মুচিখালী ইত্যাদি থেকে তার অধিকাংশ প্রবাহ পেত। উল্লিখিত সবকটি নদীই গড়াই-এর শাখা। গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প (জি-কে প্রজেক্ট) বাস্তবায়নের ফলে মাথাভাঙ্গা থেকে কুমারের উৎসমুখ এবং অন্যান্য নদীনালাগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। উৎসমুখগুলি বন্ধ করে দেওয়ায় কুমার নদ এখন ক্ষীণকায় একটি নদে পরিণত হয়েছে। কেবল গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের প্রয়োজনাতিরিক্ত পানি এবং স্থানীয় বৃষ্টিপাতই এখন এ নদের জলপ্রবাহের প্রধান উৎস। হাটবোয়ালিয়ায় উৎপন্ন হওয়ার পর কুমার নদ প্রায় ২৫ কিমি পথ অতিক্রম করে ঝিনাইদহ জেলার সীমানা বরাবর এসে শৈলকুপা উপজেলায় প্রবেশ করেছে এবং মাগুরা জেলা শহরের কাছে নবগঙ্গায় মিলিত হয়েছে। নদটির মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ১২৪ কিমি।
নদটির সমগ্র অববাহিকা জি-কে প্রজেক্টের আওতাভুক্ত। নিজস্ব কোনো পানির উৎস না থাকায় নদটি নাব্য নয়; কেবল বর্ষা মৌসুমে তিন-চার মাস নৌ চলাচল সম্ভব। সার্বিকভাবে ভাঙন প্রবণতা নেই। স্থানীয়ভাবে বেশি বৃষ্টিপাত হলে শৈলকুপা উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয় এবং ফসলের ক্ষতি হয়। নদটির উৎস থেকে গাড়াগঞ্জ পর্যন্ত গড় প্রস্থ ১০৭ মি এবং পরবর্তী অংশের (মাগুরা পর্যন্ত) গড় প্রস্থ ২৩০ মি। কুমার নদ তার সমগ্র গতিপথ এঁকে বেঁকে চলেছে।
আলমডাঙ্গা, হরিণাকুন্ডু, শৈলকুপা, শ্রীপুর, মাগুরা প্রভৃতি কুমার নদের তীরবর্তী উল্লেখযোগ্য স্থান।
(কপি পোস্ট :-শৈলকুপা পরিক্রমা)